USD/JPY: বিশ্লেষণ ও পূর্বাভাস – জাপানের জিডিপি প্রকাশের আগে ইয়েনের মূল্যের বুলিশ প্রবণতা বজায় রয়েছে

সপ্তাহের শেষ দিকে USD/JPY পেয়ারে জাপানি ইয়েনের মূল্যের বুলিশ প্রবণতা বজায় রাখার প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়েছিল, তবে উইকেন্ডের আগেই মুনাফা গ্রহণের প্রবণতার কারণে পেয়ারে ডলারের মূল্য সামান্য বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে জাপানের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে, যেখানে দেখা যায় যে অক্টোবর ২০২৫-এ পারিবারিক ব্যয়ের হার বার্ষিক ভিত্তিতে ২.৯% হ্রাস পেয়েছে। বিপরীতে, সূচকটির ১.০% প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। এই ফলাফল আগের মাসের ১.৮% বৃদ্ধিকে সম্পূর্ণভাবে ছাপিয়ে গিয়েছে এবং এপ্রিলের পর প্রথমবারের মতো হ্রাস পেয়েছে, যা এমনকি জানুয়ারি ২০২৪-এর পর সবচেয়ে দ্রুত পতন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে—যা জাপানের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

তা সত্ত্বেও, ব্যাংক অব জাপানের মুদ্রানীতি আরও কঠোর করার সম্ভাবনা USD/JPY পেয়ারে ইয়েনের দরকে ঊর্ধ্বমুখী করে তুলছে। ব্যাংকের গভর্নর কাজুও ইউয়েদা এক বক্তব্যে বলেন, মূল সুদের হার বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি "ইতিবাচক" ও "নেতিবাচক" দিক বিবেচনায় এনে ১৮–১৯ ডিসেম্বর বৈঠকে নির্ধারণ করা হবে। ট্রেডাররা এই মন্তব্যকে ইয়েনের দর বৃদ্ধি ঘটাতে সম্ভাব্যভাবে মুদ্রানীতি কঠোর করার প্রস্তুতি হিসেবেই দেখছে।

এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী সানা তাকিচি যে বড়সড় সরকারি ব্যয় পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, যার অর্থায়ন হবে নতুন বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে—তা সরকারী বন্ডের ইয়িল্ড বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। বিশেষ করে ১০-বছরের জাপানি বন্ডের ইয়িল্ড ২০০৭ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, আর ২০-বছরের বন্ডের ইয়িল্ড ১৯৯০ দশকের শেষের দিকের স্তরে পৌঁছেছে।

এর পাশাপাশি, ৩০-বছরের জাপানি সরকারি বন্ডের ইয়িল্ড রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যার ফলে জাপান ও অন্যান্য প্রধান অর্থনীতির সুদের হারের ব্যবধান আরও কমেছে। এটি স্পেকুলেটিভ ট্রেডিংয়ের সম্ভাবনা বাড়ায় এবং ইয়েনের দর বৃদ্ধি পাওয়ার পক্ষে সহায়ক। তবে, ইয়িল্ড বৃদ্ধির ফলে ঋণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সরকারি বাজেট নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে, যা জাপানের জাতীয় মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধিকে কিছুটা বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

মার্কিন ডলারের দিক থেকে দেখলে, টানা ছয় সপ্তাহ দরপতনের পর সপ্তাহের শেষে এটি সামান্য পুনরুদ্ধার করেছে, যাতে শ্রমবাজার সংক্রান্ত দুটি প্রতিবেদনের ইতিবাচক ফলাফল সাহায্ করেছে। চ্যালেঞ্জার, গ্রে অ্যান্ড ক্রিসমাস জানিয়েছে, ২০২৫ সালের নভেম্বরে পরিকল্পিত চাকরিচ্যুতির সংখ্যা ৫৩% কমে ৭১,৩২১-এ নেমেছে, যেখানে আগের মাসে তা ছিল ১,৫৩,০৭৪—যা ছিল ২০০৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ। এছাড়া, মার্কিন শ্রম বিভাগ জানিয়েছে, ২৯ নভেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে বেকারভাতার আবেদন হ্রাস পেয়ে ২৭,০০০ কমে ১৯১,০০০-এ দাঁড়িয়েছে—এটি তিন বছরের মধ্যেকার সর্বনিম্ন স্তর, যা শ্রমবাজারে তীব্র অবনতি নিয়ে উদ্বেগ কিছুটা প্রশমিত করেছে এবং ডলারের শর্ট পজিশনগুলো ক্লোজ করার সুযোগ এনে দিয়েছে।

তবে, এসব আশাব্যঞ্জক প্রতিবেদনের পরেও, ফেডের পরবর্তী বৈঠকে আবার সুদের হার হ্রাসের প্রত্যাশা USD/JPY পেয়ারের মূল্যের আরও ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনাকে সীমিত করে ফেলছে।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ

টেকনিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে, এই পেয়ারের মূল্যের ১০০-ঘণ্টার SMA লেভেল অতিক্রম করতে না পারার প্রবণতা বিক্রেতাদের পক্ষেই কাজ করে যাচ্ছে। শুক্রবার এই পেয়ারের মূল্যের কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী মোমেন্টাম দেখা গেলেও, মূল্য ১০০-ঘণ্টার SMA-র নিচেই অবস্থান করে। যদিও, চার্টের অসিলেটরগুলো বর্তমানে পজিটিভ সিগন্যাল দেখাচ্ছে। সেক্ষেত্রে, দৈনিক ভিত্তিতে যেকোনো দরপতন ৫০-ঘণ্টার SMA ও 155.00-এর রাউন্ড লেভেলে যথাযথ সাপোর্ট লেভেল খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।

অন্যদিকে, উল্লেখযোগ্য মূল্য বৃদ্ধি প্রচেষ্টা 155.40 ও ১০০-ঘণ্টার SMA লেভেলে রেজিস্ট্যান্সের সম্মুখীন হবে। এই লেভেলের ওপরে দীর্ঘস্থায়ী শক্তিশালী মুভমেন্ট শর্ট পজিশনগুলোকে ক্লোজ করতে প্ররোচিত করবে এবং USD/JPY পেয়ারের মূল্যকে 156.00 বা তার ওপরের লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে যেতে পারে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, দৈনিক চার্টে থাকা অসিলেটরগুলোর অবস্থানও বর্তমানে পজিটিভ, যা বুলিশ প্রবণতা জন্য একটি সহায়ক ইঙ্গিত।