যতটা মনে হচ্ছে পরিস্থিতি ততটা খারাপ নয়

যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্ব সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর মার্কিন ডলার ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেটের বিপরীতে অস্থায়ীভাবে দরপতনের শিকার হয়; তবে এই প্রতিবেদন গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার পর ট্রেডারদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়।

প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার 4.6%-এ পৌঁছেছে—যা কোভিড-১৯ মহামারির চূড়ান্ত পর্যায়ের পর প্রথম এতটা উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যদিও এখনও দেশটির শ্রমবাজার পরিস্থিতির দুর্বল হওয়ার সংকেত পাওয়া যাচ্ছে, তবে জানুয়ারি মাসে ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃক সুদের হার আরও কমানোর সম্ভাবনা মাত্র ২০%।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নভেম্বর মাসে দেশটির কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার মন্থর ছিল। অক্টোবরে 105,000 কর্মসংস্থান হ্রাসের পর, নভেম্বর মাসে নন-ফার্ম পে-রোলস মাত্র 64,000 বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই তথ্য অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে গেছে, যারা কেবল 50,000 নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রত্যাশা করেছিলেন। উল্লেখযোগ্য যে, অক্টোবর মাসে মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মসংস্থানে বড় ধরনের পতনের কারণে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান হ্রাস ঘটেছিল, যা মার্কিন সরকারি কার্যক্রমের অচলাবস্থার প্রভাব ছিল। সেই দিক থেকে দেখে সার্বিক পরিস্থিতি অতটা ভয়াবহ নয়।

মার্কেটের ট্রেডাররা প্রাথমিকভাবে এই আশঙ্কার ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল যে, শ্রমবাজারের দুর্বল পরিস্থিতি ফেডকে আর্থিক নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য করবে। তবে বিস্তারিত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার এবং মজুরি বৃদ্ধির হার এখনও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, যদিও মার্কিন শ্রমবাজার কিছুটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, তবুও এটি এখনো সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে বলা যাবে না।

মনে করিয়ে দিই, গত সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভ টানা তৃতীয় বৈঠকে সুদের হার কমিয়েছে, ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের ভাষায় শ্রমবাজারের পরিস্থিতি "ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হওয়ার" প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে—বিশেষত যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও মন্থরতার ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে আগামী বছর আরও সুদের হার কমানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ফেডের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ রয়েছে। সিদ্ধান্তের সঙ্গে প্রকাশিত পূর্বাভাস অনুযায়ী ফেডের পক্ষ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত মাত্র একবার সুদের হার কমানোর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, যেখানে কিছু নীতিনির্ধারক আরও নমনীয় নীতিমালার কোনো সম্ভাবনাই দেখছেন না।

নভেম্বর মাসে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রেখেছে স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সহায়তা খাত এবং নির্মাণ খাত। নভেম্বর বেসরকারি খাতে মাসিক ভিত্তিতে কর্মসংস্থান 69,000 বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে অক্টোবর মাসে এই বৃদ্ধি ছিল 52,000। তবে পরিবহন, গুদামজাত ও আতিথেয়তা খাতে কর্মসংস্থান কমে গেছে।

এক পৃথক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রয় কার্যত অপরিবর্তিত ছিল—গাড়ি বিক্রিতে পতন এবং গ্যাস বিক্রির আয় হ্রাস অন্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পুষিয়ে দিয়েছে। ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়িক কার্যক্রম গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে মন্থর গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে।

EUR/USD পেয়ারের বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, ক্রেতাদের এখন এই পেয়ারের মূল্যের 1.1750 লেভেল ব্রেক করানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কেবল এই ব্রেকআউটের মাধ্যমেই এই পেয়ারের মূল্যের 1.1770-এর লেভেলে পৌঁছানোর সম্ভাবনা উন্মুক্ত হবে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্য সম্ভবত 1.1800 পর্যন্ত যেতে পারে, যদিও বড় ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.1835 লেভেল। তবে যদি এই পেয়ারের মূল্য নিম্নমুখী হয়, তাহলে আমি মূল্য 1.1715 লেভেলের কাছাকাছি থাকা অবস্থায় ক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার প্রত্যাশা করবো। সেখানে যদি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বড় ক্রেতা না থাকে, তবে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1685 লেভেলে নেমে যাওয়ার প্রত্যাশা করা যেতে পারে অথবা 1.1650 থেকে লং পজিশন ওপেন করাই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হবে।

GBP/USD পেয়ারের বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, পাউন্ডের ক্রেতাদের প্রধান লক্ষ্য হবে নিকটবর্তী রেজিস্ট্যান্স 1.3385 লেভেল ব্রেক করানো। এই পেয়ারের মূল্য কেবল এই লেভেল অতিক্রমের পরই 1.3420 লেভেলে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের সুযোগ তৈরি হবে; যদিও এই লেভেল ব্রেকআউট করে ঊর্ধ্বমুখী হওয়া কঠিন হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.3450 লেভেল। অপরদিকে, যদি এই পেয়ারের মূল্য নিম্নমুখী হয়, তাহলে মূল্য 1.3340 লেভেলে থাকা অবস্থায় মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করবে। তারা সফল হলে, এই রেঞ্জ ব্রেক করে GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3320 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে এবং শেষপর্যন্ত 1.3285 পর্যন্তও দরপতন হতে পারে।