ইউরোজোনে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মন্থরতা বড় কোনো উদ্বেগ সৃষ্টি করছে না

গতকাল প্রকাশিত S&P Global-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে ইউরোজোনে বেসরকারি খাতের কার্যক্রম প্রত্যাশার তুলনায় কমহারে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে জার্মানির উৎপাদন খাত অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোজোনের সম্মিলিত পারচেসিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (PMI) নভেম্বরে 52.8 থেকে নেমে এসে ডিসেম্বরে 51.9-এ দাঁড়িয়েছে, যদিও এটি এখনও ৫০-এর উপরে রয়েছে—যা কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং সংকোচনের মাঝের দেয়াল হিসেবে বিবেচিত হয়।

জার্মানির উৎপাদন খাতের দুর্বলতাই এই সূচকের পতনের মূল কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে উৎপাদন খাতের মান গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায়। একইসাথে, দেশটির পরিষেবা খাতের ফলাফলও হতাশাজনক ছিল। অপরদিকে, ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সূচক বিশ্লেষকদের বিস্মিত করেছে, কারণ দেশটি গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রদর্শন করেছে।

ইউরোজোন PMI সূচকের হ্রাস অঞ্চলটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পতনের ইঙ্গিত দেয়, যদিও সূচকটিতে এখনও সম্প্রসারণের চিত্রই প্রতিফলিত হচ্ছে। তবে বিশেষভাবে উদ্বেগজনক বিষয় হলো জার্মানির উৎপাদন খাতের দুর্বলতা—যা ইউরোজোনের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি এবং এটি গোটা অঞ্চলের জন্য আসন্ন চ্যালেঞ্জের পূর্বাভাসের ইঙ্গিত দিতে পারে। উৎপাদন খাতের পতন এবং জার্মানির পরিষেবার খাতের দুর্বলতা ইউরোপীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দৃঢ়তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করছে। তা সত্ত্বেও, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) সম্ভবত মুদ্রানীতিতে তাৎক্ষণিক কোনো পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে না।

PMI সূচকের এই সামান্য পতন বিভিন্ন কারণের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে—যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি, অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি, সুদের হার এবং ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এসব কারণ ভোক্তা ব্যয় ও ব্যবসায়িক বিনিয়োগের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যার ফলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়েছে।

স্বল্পমেয়াদে ইউরোজোনের অর্থনীতি আরও মন্থর হতে পারে, কারণ নেতিবাচক উপাদানগুলো এখনও বিদ্যমান রয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে—এই প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে ইসিবির দক্ষতা ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের উপর—যেখানে একদিকে মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।

যদিও ইউরোপ বাণিজ্য শুল্কের ধাক্কা ও ভূরাজনৈতিক বিধ্বস্ততার মধ্যেও প্রাসঙ্গিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রদর্শন করে যাচ্ছে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ইউরোজোনের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। এর পরবর্তী সময়ে, ২০২৫ সালের শেষ মাসগুলোতে অর্থনীতি কিছুটা মন্থর হতে পারে, তবে নতুন বছরের শুরুতে পুনরায় গতিশীলতা ফিরে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, "পুরো ইউরোজোনের সম্মিলিত PMI সূচকের ফলাফল এই ধারণাকে সমর্থন করে যে, মার্কিন শুল্কের চাপ সত্ত্বেও ইউরোপীয় অর্থনীতি দৃঢ়তা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এই প্রবৃদ্ধি এখনও খুব বেশি দ্রুতগামী নয়। এই পরিস্থিতিতে ইসিবি সম্ভবত চলতি সপ্তাহে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবে, তবে ভবিষ্যতের মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতা আগামী বছর এই সিদ্ধান্তকে জটিল করে তুলতে পারে।"

মঙ্গলবার প্রকাশিত ZEW ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে অবাক করার মতো তথ্য উঠে এসেছে—জার্মানি ও ইউরোজোনের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস নাটকীয়ভাবে ইতিবাচক ছিল। ZEW প্রেসিডেন্ট আখিম ওয়ামবাখ বলেছেন, "প্রসারিত রাজস্বনীতি নতুন গতিশীকতা সৃষ্টি করছে।" তিনি আরও বলেন, "তবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি এখনও বেশ দুর্বল। ২০২৬ সালের সংস্কার কর্মসূচিতে সম্ভবত দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্যিক বিরোধ, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বিনিয়োগ ঘাটতির সমাধানমূলক পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করা হবে।"

EUR/USD পেয়ারের বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, ক্রেতাদের এখন এই পেয়ারের মূল্যের 1.1750 লেভেল ব্রেক করানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কেবল এই ব্রেকআউটের মাধ্যমেই এই পেয়ারের মূল্যের 1.1770-এর লেভেলে পৌঁছানোর সম্ভাবনা উন্মুক্ত হবে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্য সম্ভবত 1.1800 পর্যন্ত যেতে পারে, যদিও বড় ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.1835 লেভেল। তবে যদি এই পেয়ারের মূল্য নিম্নমুখী হয়, তাহলে আমি মূল্য 1.1715 লেভেলের কাছাকাছি থাকা অবস্থায় ক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার প্রত্যাশা করবো। সেখানে যদি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বড় ক্রেতা না থাকে, তবে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1685 লেভেলে নেমে যাওয়ার প্রত্যাশা করা যেতে পারে অথবা 1.1650 থেকে লং পজিশন ওপেন করাই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হবে।

GBP/USD পেয়ারের বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, পাউন্ডের ক্রেতাদের প্রধান লক্ষ্য হবে নিকটবর্তী রেজিস্ট্যান্স 1.3385 লেভেল ব্রেক করানো। এই পেয়ারের মূল্য কেবল এই লেভেল অতিক্রমের পরই 1.3420 লেভেলে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের সুযোগ তৈরি হবে; যদিও এই লেভেল ব্রেকআউট করে ঊর্ধ্বমুখী হওয়া কঠিন হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.3450 লেভেল। অপরদিকে, যদি এই পেয়ারের মূল্য নিম্নমুখী হয়, তাহলে মূল্য 1.3340 লেভেলে থাকা অবস্থায় মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করবে। তারা সফল হলে, এই রেঞ্জ ব্রেক করে GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3320 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে এবং শেষপর্যন্ত 1.3285 পর্যন্তও দরপতন হতে পারে।