![]()
সুদহার তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নামিয়ে এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)। উত্তেজনাপূর্ণ ও দ্বিধা-বিভক্ত দুদিন বৈঠকের পর গত বুধবার এ সিদ্ধান্ত আসে। বৈঠকে উত্তেজনার কেন্দ্রে ছিল দুটি বিষয়। সুদহার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দুর্বল শ্রমবাজার ও তুলনামূলক উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে কোনটিকে প্রাধান্য দেয়া হবে, তা নিয়ে বিতর্ক হয়। ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির (এফওএমসি) বৈঠক শেষে সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর ঘোষণা আসে। এতে ওয়াল স্ট্রিটের প্রত্যাশা অনুযায়ী সুদহার কমে এসেছে ৩ দশমিক ৫ থেকে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ সীমায়। এ নিয়ে চলতি বছর তৃতীয়বার সুদহার কমল যুক্তরাষ্ট্রে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার বেড়েছে এবং নতুন কর্মসংস্থান কমেছে। এতে চাকরির বাজারে নিম্নমুখী ঝুঁকি বাড়ায় সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি ফেডের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা উচ্চস্তরে থাকায় সুদহার অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে ছিলেন কেউ কেউ।
ফেডের সুদহার হ্রাসের ঘোষণার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে আর্থিক বাজারে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি নিয়ে বুধবার লেনদেন শেষ করে। ওয়াল স্ট্রিটের অন্য দুই গুরুত্বপূর্ণ শেয়ারবাজার সূচক ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ও নাসডাক কম্পোজিট বেড়েছে যথাক্রমে ১ দশমিক শূন্য ৫ ও দশমিক ৩৩ শতাংশ। সাধারণ ফেডের নীতির প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল থাকে দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড। এর ইল্ড দশমিক শূন্য ৭ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
ফেডের নীতিনির্ধারণী কমিটির ১২ ভোটারের মধ্যে তিনজন সুদহার কর্তনের বিরুদ্ধে ভোট দেন। ২০১৯ সালের পর এটিই সবচেয়ে বড় আপত্তির ঘটনা।
অনেক দিন ধরে সুদহার কমাতে চাপ দিয়ে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বিষয়ে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে বরাবরই তোপের মুখে রেখেছেন তিনি। গত বুধবার ট্রাম্প বলেন, ‘অন্তত দ্বিগুণ সুদহার কমানো উচিত ছিল ফেডের।’
বৈঠকে ট্রাম্পঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ফেডের বোর্ড সদস্য স্টিফেন মাইরান দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট সুদহার কমানোর পক্ষে ছিল, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। অন্যদিকে শিকাগো ফেড গভর্নর অস্টান গুলসবি ও কানসাস সিটির জেফরি শ্মিড সুদহার অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে ভোট দেন।
এদিকে আগামী বছর ফের সুদহার কমানো হতে পারে এমন বাজার প্রত্যাশার মাঝে জেরোম পাওয়েল ইঙ্গিত দিয়েছেন, ওই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হবে। এর আগে ব্যাপকভাবে পরিস্থিতির ওপর নজরদারি প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘সুদহার এখন ভারসাম্যপূর্ণ স্তরের মধ্যে রয়েছে। অর্থনীতি সামনে কীভাবে এগোয়, তা পর্যবেক্ষণ করাই এখন গ্রহণযোগ্য অবস্থান।’
আগামী বছর সুদহার কমানো নিয়ে নীতিনির্ধারকদের পূর্বাভাসে স্পষ্ট বিভাজন দেখা যাচ্ছে। ডট প্লেটে সংকলিত মধ্যবর্তী পূর্বাভাসে চার ফেড সদস্য বলছেন, আগামী বছর একবার দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট সুদহার কমতে পারে। তবে তিন সদস্য মনে করেন, ২০২৬ সালের শেষে সুদহার এখনকার তুলনায় বেশি হবে। আবার একজন মনে করেন, ২০২৬ পর্যন্ত ছয় দফা সুদহার কমানো প্রয়োজন হতে পারে। তবে যেকোনো ধরনের কর্তনের বিপক্ষে রয়েছে ছয়জন।
জেরোম পাওয়েল বলেন, ‘সবারই মত হলো মূল্যস্ফীতি বেশি, তা কমা দরকার। শ্রমবাজার দুর্বল হয়েছে। পার্থক্যটা শুধু এটাই কে কোন ঝুঁকিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।’
ম্যান গ্রুপের ক্রিস্টিনা হুপার বলেন, ‘সুদহার বিষয়ে আগামীতে বিতর্ক আরো বাড়বে। কারণ বোর্ডে মতপার্থক্য অনেক। তাদের অগ্রাধিকারও আলাদা।’
ফেডের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে, আগামী বছরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াতে পারে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। এটি আগের পূর্বাভাস ২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কম। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক ভিত্তিতে ব্যক্তিগত ভোক্তাব্যয়ের (পিসিই) মূল্যস্ফীতি ছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ। অথচ ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ।
এদিকে ফেড জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বাজারে চাপ কমাতে তারা আবার স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি বন্ড কিনবে। চলতি মাসের শুরুতে ফেড ব্যালান্স শিট সংকোচন স্থগিত করেছে। কারণ নীতিনির্ধারকরা ধারণা করছেন, ২০২২ থেকে ফেড বাজার থেকে অনেক অর্থ তুলে নিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, যথেষ্ট হয়েছে। তাই মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো কড়া পদক্ষেপ নেবে না, বরং কিছু তারল্য ফিরিয়ে দিতে পারে।
ফেড চেয়ারম্যান হিসেবে আগামী মে মাসে মেয়াদ শেষ হচ্ছে জেরোম পাওয়েলের। এ পদে ট্রাম্প এমন কাউকে খুঁজছেন যিনি সুদহার কমানোর পক্ষে সিদ্ধান্ত নেবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যিনি সুদহারের বিষয়ে সৎ হবেন, তিনি হবেন ফেড চেয়ারম্যান। আসলে সুদহার আরো অনেক কম হওয়া উচিত।’
ট্রাম্প কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন, আগামী বছরের শুরুতে নতুন ফেড চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করবেন। তবে এখন বলছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই নাম ঘোষণা হতে পারে।